top of page
Search

বাঙালীর ভূত চতুর্দশী

  • Writer: সাবেকি ইতিহাস
    সাবেকি ইতিহাস
  • Nov 26, 2020
  • 2 min read

Updated: Dec 22, 2020

দীপান্বিতা অমাবস্যার আগে চতুর্দশী তিথিতে হিন্দু মতে ভূত চতুর্দশী পালন করা হয়। ভুত অর্থাৎ অতীত। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী শরীর থেকে প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে মৃতদেহ পঞ্চভূতে লীন হয়ে যায়। এই পঞ্চভূত হল - ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুত্‍ , ব্যোম। এই ভুতকেই আমরা প্রেতাত্মা বা অশরীরী বলে মনেকরি।



কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে হয় কালীপূজা। কোজাগরী পূর্ণিমার কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চদশীতে। এর ঠিক আগের রাত, অর্থাৎ আজ, হলো ভূত চতুর্দশী। বাঙালি এইদিন চৌদ্দ শাক খেয়ে চৌদ্দপুরুষকে স্মরণ করেন। পুরান মতে দানব রাজা বলি স্বর্গ, মর্ত ও পাতাল এই ত্রিলোক জয় করার পরে দেবতা, মানব ও জীবজন্তুদের উপর অত্যাচার শুরু করে। তখন ভগবান বিষ্ণু ব্রাহ্মণ রূপ ধারণ করে রাজা বলির কাছে ভিক্ষা চাইতে যান। ভিক্ষা দানে চুক্তি হয় যে ব্রাহ্মণের পা গুলি যতটুকু অংশ জুড়ে থাকবে ততটা অংশ দান করবে রাজা বলি। চুক্তিতে রাজি হন বলি। দুই পা দিয়ে স্বর্গ ও মর্ত্য দখল করে ফেলেন বিষ্ণু। এরপর নাভি থেকে বের হয় তাঁর তৃতীয় পা, যা রাখলেন বলি রাজার মাথার উপর। সঙ্গে সঙ্গেই পাতালে নেমে গেলেন দানবরাজ বলি। তারপর থেকে পাতালেই থাকলেন তিনি। তবে ভগবানের প্রতি অনুগত হওয়ায় ভগবান বিষ্ণু তাকে করুণা করলেন। প্রতিবছর মর্ত্যে তাঁর পূজা হবে এই আশীর্বাদ দেন তিনি। তারপর থেকেই ভুত চতুর্দশীর উদ্ভব। মনে করা হয় যে পাতাল লোক থেকে শত-সহস্র ভুতেদের নিয়ে মর্ত্যে আসেন রাজা বলি।



এই তিথি সম্পর্কে আবার অন্য ধারণাও আছে। অনেকে মনেকরেন ভুত চতুর্দশীর দিন যমের দরজা খুলে যায় এবং চোদ্দপুরুষের আত্মা পৃথিবীতে আসে। এই দরজা আবার ভাইফোঁটার দিন বন্ধ হয়ে যায় (ভাইফোঁটার মন্ত্রে যা উচ্চারিত হয়)। যাইহোক, চোদ্দপুরুষের আত্মাদের তুষ্ট করতে এবং সংসারের অমঙ্গল থেকে বাঁচতে চৌদ্দ শাক খাওয়া ও চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালানো হয়। অনেক স্থানে চৌদ্দ ফোঁটা দেওয়া হয়, চৌদ্দ সাকে ভেজানো জল বাড়ির চারিপাশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওল, পুঁই, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা ও শুষণী- এই চৌদ্দ রকমের শাক একসঙ্গে রান্না করার প্রথা রয়েছে ভূত চতুর্দশীতে। চৌদ্দ শাক ভাজা আর চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালানোর পশ্চাতে কিন্তু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। বলা হয়, হেমন্তের শুরুতে পোকার উপদ্রব দূর করতে বাড়িতে চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালানো হয়। আবার ঋতুর পরিবর্তনের কারণে এই সময়টা অসুখ বিসুখ হয় বেশি, তাই চৌদ্দ রকমের শাক খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। অনেকেই মনে করেন মধ্যযুগের কৃষি প্রধান বাংলায় কৃষি সম্পর্কের রীতি-নীতির বাড়বাড়ন্ত, চৌদ্দ শাকের ব্যাবহার তার স্পষ্ট উদাহরণ।



পূরণে উল্লেখ থাকলেও ভুতচতুর্দশী বাংলা ছাড়া অন্যত্র তেমন ভাবে পালিত হয়না। উত্তর ভারতে দীপাবলীর আগের দিনকে নরক চতুর্দশী বলা হয়, আবার পশ্চিমী দেশ গুলিতে এই সময় করে ভৌতিক উৎসব রূপে হেলোইন উৎসব পালন করা হয়। মিষ্টি কুমড়ো থেকে কেটে চোখ ও মুখের আকৃতি তৈরি করা হয় এবং তার ভিতর বাতি লাগিয়ে বাড়ির সম্মুখে ঝুলিয়ে দেওয়ার পরম্পরা চলে পশ্চিমী দেশ গুলিতে। ৩১শে অক্টোবর তার নির্দিষ্ট দিন। কিন্তু বাংলায় ভুতচতুর্দশী পালিত হয় তিথি মেনে।




তথ্যসূত্র:


১) পল্লব সেনগুপ্ত: পূজা-পার্বণের উৎসকথা, পুস্তক বিপণি, ১৯৫৯

২) কেদারবদ্রী পত্রী: ভূত চতুর্দশীতে কেন ১৪ শাক-১৪ প্রদীপ, জানেন? EiSamay.Com


◾চিত্র সংগ্রহ: Google Images

 
 
 

Comments


bottom of page