top of page
Search

শ্রীরামপুরের গুটকে সন্দেশ

  • Writer: সাবেকি ইতিহাস
    সাবেকি ইতিহাস
  • Dec 25, 2020
  • 3 min read

'মিষ্টি', নাম শুনলেই মুখে হাঁসি ফুটে উঠবেনা এমন বাঙালী বোধহয় খুব কমই আছে। তা সে শক্তিগড়ের 'ল্যাংচা' হোক, বা কলকাতার 'রসগোল্লা', বর্ধমানের 'সীতাভোগ' হোক বা জয়নগরের 'মোয়া'। বাঙালির সাথে মিষ্টির বেশ একটা আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। এতটাই আবেগ যে মিষ্টির কৃতিত্ত্ব নিয়ে পড়শী রাজ্যের সাথে আদালতে সংঘাতে যেতে হয়েছে। মিষ্টি বলে কথা ! যাইহোক, আজকে আমরা তেমনই এক আঞ্চলিক মিষ্টির উল্লেখকরি। দেখতে ততটা এলাহী না হলেও প্রাচীনত্ব বেশ অনেকখানি। শ্রীরামপুরের 'গুটকে সন্দেশ'।


মহেশ চন্দ্র দত্ত, মানিকতলা, শ্রীরামপুর, হুগলী


স্থাপিত: ১২৩২ বঙ্গাব্দ (১৯৫ বছর পুরাতন)


গুটকে কচুরির নামটা আশাকরি শোনা আছে। তেমনি গুটকে সন্দেশ। যদিও দুই খাদ্যের মধ্যে কোনো মিল নেই। অনেকে মনে করেন গুটকে সন্দেশের ধারণা এসেছে গুপ্তিপাড়ার গুপে সন্দেশ থেকে। একই পদ্ধতি অনেকটা। ছোট ছোট দুটি কড়া পাকের সন্দেশের খন্ড, দেখতে অনেকটা লুচির লেচির মতন। জুড়ে দিলেই তৈরি গুটকে সন্দেশ। স্বাদও অসাধারণ। ছানার তৈরি সন্দেশ, মুখে যেনো গলে যায় ! তবে গুটকে সন্দেশ কিন্তু শ্রীরামপুরের সর্বত্র পাবেননা। হাতে গোনা কয়েকটি দোকানেই পাবেন। এদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ হলো মহেশ চন্দ্র দত্ত মিষ্টির দোকান। কলকাতা থেকে মাত্র ২৪ কিমি দূরত্বে, জি. টি. রোডের একদম পাশে, শ্রীরামপুরের মানিকতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু এগিয়ে ডান হাতে পড়বে এই দোকানটি। স্থানীয় অধিবাসীরা এই গুটকে সন্দেশ খুবই উপভোগ করেন। যেকোনো পূজা পার্বণে, বিশেষ করে রাধাবল্লভের পূজায় এই মিষ্টি স্থানীয়ভাবে খুবই প্রচলিত। এছাড়া এই দোকানের মিষ্টি দই ও মনোহরাও খুবই প্রসিদ্ধ। দোকানে কোনো ভাজা মিষ্টি তৈরি হয়না, কারণ রাধাবল্লভ ভাজা মিষ্টির প্রসাদ গ্রহণ করেননা।


গুটকে সন্দেশ


দোকানটিতে এলে মনে হবে আপনার সামনে সাক্ষাৎ ইতিহাস দাঁড়িয়ে আছে। খাসা পুরোনো দোকান। করিবর্গার ছাদ। উঁচু বেদির মতন মেঝে, আর তার উপর পুরোনো কাঠের বাক্সে বিভিন্ন মিষ্টি সাজানো। বিশেষ করে সন্দেশ, কারন দোকানের বাইরে নামের ফলকে বড় বড় করে লেখা, 'জনপ্রিয় সন্দেশ বিক্রেতা'। ১২৩২ বঙ্গাব্দে এই দোকানটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, অর্থাৎ প্রায় দুই শতাব্দী প্রাচীন একটি মিষ্টির দোকান। এর সৃষ্টিকর্তা ছিলেন মহেশ চন্দ্র দত্ত, তাঁর নামেই দোকানটি। তবে আর পাঁচটা পুরোনো দোকানের মতন সাধারণ দোকান এটি নয়। মানিকতলার প্রাচীন রাধাবল্লভের মন্দিরের সাথে এক আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে এই দোকানের। রয়েছে এক জনপ্রিয় গল্পও।


কাঠের বাক্সে মিষ্টি প্রদর্শন


সে অনেক আগেকার কথা। মহেশ চন্দ্র দত্ত সবেসবে সন্দেশ বিক্রি শুরু করেছেন। তখন একটি ছোট্ট বালক দোকানে এসেছিল গুটকে সন্দেশে খাবে বলে। বালকটির কাছে পয়সা-করি কিছু ছিল না। ক্ষুধার্থ বালক তখন তার হাতের সোনার বালাটি বন্ধক দিয়ে মহেশ চন্দ্রের কাছ থেকে গুটকে সন্দেশ খায়। পরের দিন রাধাবল্লভ মন্দিরের একজন পুরোহিত একটি বিস্ময়কর বিষয় লক্ষ্য করেন। রাধাবল্লভ ঠাকুরের হাতের সোনার বালাটি উধাও। তিনি অসহায়ের মতন ভেউভেউ করে কাঁদতে লাগলেন। স্থানীয় মানুষ-জন আতঙ্কিত হয়ে পড়লো। সবাই খোঁজাখুঁজি করলো কিন্তু কিছুই পেলোনা। সবাই ধরেই নিলো যে বালাটি চুরি হয়েগেছে। সেই রাতে প্রভু রাধাবল্লভ ওই পুরােহিতকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বললেন যে, তিনি মহেশ চন্দ্র দত্তের কাছ থেকে গুটকে সন্দেশ খেয়েছেন তার সােনার বালা বন্ধক রেখে। এখন বালাটি মহেশ চন্দ্র দত্তের কাছে রয়েছে। পয়সা দিয়ে মন্দিরের পুরোহিত যেনো বালাটি ছাড়িয়ে নিয়ে আশে। পরের দিনই পুরোহিত মশাই ওই সোনার বালাটি মহেশ চন্দ্র দত্তের কাছে আবিষ্কার করেন। তিনি টাকা দিয়ে বালাটি ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। তবে থেকেই দোকানের খ্যাতি হয় তার গুটকে সন্দেশের জন্য। স্বয়ং রাধাবল্লভ খেয়েছেন বলে কথা ! এই গল্পের সত্যতা খুঁজে পাওয়া আমাদের পক্ষে দুষ্কর। তবে মৌখিক ঐতিহ্য নিশ্চিত ভাবেই ইতিহাসকে এক নতুন রূপে সাজিয়েছে। যেমন কালোজামের উপর রাংতা !


প্রাচীন রাধাবল্লভের বিগ্রহ


কলকাতায় এমন কত প্রাচীন মিষ্টির দোকান আছে। বিশাল বয়স তাদের। রূপও তেমনি। আর মিষ্টির কি বাহার ! এত গুলো পদ, এক নিশ্বাসে বলাই যাবেনা। মিষ্টির ময়রার কাজ কোথাও কোথাও যন্ত্রই নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু শ্রীরামপুরের এই মিষ্টির দোকানটি আজও সেই প্রাচীন রূপটি ধরে রেখেছে। ঐতিহ্যের রসে ডুবিয়ে পুরাতন মিষ্টি পেয়েছে ইতিহাসের স্নিগ্ধতা ! সঙ্গে রয়েছে লোককথার মধুর সৌরভ।



তথ্যসূত্র:


১) সুব্রত রুজ: মিষ্টান্নমিতরে


◾চিত্র সংগ্রহ: Google Images


Google maps-এ অবস্থান

Mahesh Chandra Dutta - Maniktala

575, Grand Trunk Rd, Maniktala, Serampore, West Bengal 712201

https://maps.app.goo.gl/hX16tUPBKrYmUc82A

 
 
 

Comments


bottom of page